সিভিল এভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা || অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (08-11-2024) || 2024

All Written Question

বাংলাদেশের শ্রমবাজার: সংকট ও সমাধান

ভূমিকা:
বাংলাদেশ একটি শ্রমনির্ভর অর্থনীতির দেশ। দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কর্মক্ষম, যা দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজার এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার উভয়ই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে শ্রমবাজারে বিভিন্ন সংকট ও সীমাবদ্ধতা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এসব সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে শ্রমশক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।

শ্রমবাজারের বর্তমান অবস্থা:
বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত: অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক। অভ্যন্তরীণ বাজারে অধিকাংশ মানুষ কৃষি খাতে কর্মরত, তবে শিল্প ও সেবাখাতে কর্মসংস্থানের হার বাড়ছে। অন্যদিকে, প্রবাসী শ্রমিকরা দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের বড় উৎস। তবে এসব শ্রমিকের অনেকেই অদক্ষ এবং অল্প মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হয়।

শ্রমবাজারের সংকট:
বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রধান সংকটগুলোর মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব, অদক্ষতা, স্বল্প মজুরি, এবং শ্রম অধিকার লঙ্ঘন। অধিকাংশ শ্রমিক কারিগরি দক্ষতার অভাবে মানসম্মত চাকরি পান না। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা করতে অদক্ষ শ্রমিকরা হিমশিম খায়। উপরন্তু, মধ্যস্থতাকারীদের অনিয়ম এবং বিদেশগামী শ্রমিকদের উচ্চ ব্যয় সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তোলে।

সমাধান:
এই সংকটগুলো মোকাবিলায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর একত্রিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে এবং কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে ভাষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। মধ্যস্থতাকারীদের অনিয়ম রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষায় কার্যকর নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন।

উপসংহার:
বাংলাদেশের শ্রমবাজার একটি বড় সম্পদ, যা সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। তবে বিদ্যমান সংকটগুলো দূর করা ছাড়া এই সম্পদ পুরোপুরি কাজে লাগানো যাবে না। দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, এবং শ্রমিক সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি শক্তিশালী ও টেকসই শ্রমবাজার তৈরি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকার, বেসরকারি খাত, এবং সাধারণ জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টাই হবে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের প্রধান চাবিকাঠি।

মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

মূলভাব: কর্মহীন দীর্ঘজীবনের চেয়ে কর্মময় সংক্ষিপ্ত জীবন বেশি মর্যাদাবান। কর্মই মানুষকে অমরত্ব দান করে। আর সৎকর্মের মাঝেই মানুষ বেঁচে থাকে।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ মাত্রই জন্ম-মৃত্যুর অধীন। প্রকৃতিতে বিচরণশীল জীবকুল প্রাকৃতিক নিয়মেই জন্মলাভ করে, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। মৃত্যুর সাথে সাথেই তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ এক্ষেত্রে প্রকৃতি রাজ্যের অন্যান্য জীবের তুলনায় ব্যতিক্রম। মানুষের জন্ম-মৃত্যু প্রাকৃতিক নিয়মে হলেও মানুষ কর্মের মাধ্যমে জগতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলে মানুষকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়- এটা চিরন্তন সত্য। প্রকৃতির এ এক অমোঘ নিয়ম। অন্যান্য জীবের ন্যায় মানুষকেও মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হয় কিন্তু তাঁর পেছনে পড়ে থাকে মহৎ কর্মের ফসল; যে কর্মের জন্য তিনি মরেও পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকেন। জন্ম-মৃত্যুর উপর মানুষের হাত নেই, কিন্তু কর্মের উপর মানুষের পরিপূর্ণ হাত রয়েছে। মানুষ চাইলেই ভালো বা মন্দ যেকোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। কিন্তু কেউ যদি কোন ভালো কাজ না করে তবে সে জীবন অর্থহীন, নিষ্ফল। কেউ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে না।

পক্ষান্তরে যে মানুষের জীবন কর্মব্যস্ত, নিজেকে যিনি সদা জীবন ও জগতের উপকারার্থে নিয়োজিত রাখেন, তাকে সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, 'Man does not live in years but in deeds'.

মহামানবদের জীবনী পাঠ করলেও আমরা এই প্রবাদের সার্থকতা খুঁজে পাই। হাজী মোহাম্মদ মুহসীন থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ মনীষীগণ তাঁদের কর্মের দ্বারাই পৃথিবীতে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। আবার বিপরীত দিক থেকে মানুষ তার কর্মের জন্যেই ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়ে থাকে। ফেরাউন থেকে শুরু করে হিটলার, মীরজাফরদের পৃথিবী ঘৃণাভরে স্মরণ করে। তাই আয়ুষ্কাল যাই হোক না কেন কর্মই মানুষের পরিচিতি নির্ধারণ করে। আয়ুষ্কালের দিক থেকে কেউ স্বল্পায়ু বা দীর্ঘায়ুর অধিকারী হতে পারে, কিন্তু ব্যক্তির কর্মই ব্যক্তিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাঁচিয়ে রাখে। কীর্তিমান ব্যক্তির যেমন মৃত্যু নেই, তেমনি শেষও নেই, কারণ এ পৃথিবীতে সে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব।

কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তাঁর দেহের ধ্বংস সাধন হয় বটে, কিন্তু তাঁর সৎ কাজ এবং অম্লান কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে বাঁচিয়ে রাখে। তাঁর মৃত্যুর শত শত বছর পরেও মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তাই সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায়, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা কর্ম-সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল। যাদের কর্মে পৃথিবীর কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না পৃথিবী তাদের মনে রাখে না। মৃত্যুর সাথে সাথেই তারা বিস্মৃত হয়ে যান।

মন্তব্য: কীর্তিমানের শারীরিক মৃত্যু থাকলেও মানসিক মৃত্যু নেই। কর্মের মহত্ত্বে কীর্তিমানরা মানুষের অন্তরে অনন্তকাল চিরঞ্জীব হয়ে ভাস্বর থাকেন।